বিডিনিউজ ১০, ইসলাম ডেস্ক: বরকতময় মাস রমজান। এ মাস জুড়ে রোজা পালন মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত আবশ্যক ইবাদত। কুরআনে পাকে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। রোজা রাখার উদ্দেশ্যও বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘রমজান সেই মাস; যে মাসে পবিত্র কুরআন নাজিল করা হয়েছে। যে কুরআন মানব জাতির জন্য পথ প্রদর্শক। আর তাতে রয়েছে সুস্পষ্ট হেদায়েত। যা হক ও বাতিলের পার্থকারী। সুতরাং তোমাদের যে কেউ এ মাস পবে তাকে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে। আর যে (এ মাসে) অসুস্থ কিংবা মুসাফির হবে সে অন্য সময় এ সংখ্যা (রমজানের রোজা) পূর্ণ করে নেবে। তোমাদের জন্য যা সহজ আল্লাহ তাই করেন। আর যা তোমাদের জন্য কঠিন তা তিনি করার ইচ্ছা করেন না। যেন তোমরা নির্ধারিত (রমজান মাসের) সময়টি সম্পূর্ণ করতে পার এবং আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর, কেননা আল্লাহ তোমাদের সঠিক পথ দেখিয়েছেন। যাতে তোমরা তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)
যেসব শর্তের আলোকে মানুষের ওপর রোজা রাখা ফরজ, তা পাওয়া গেলে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে। এমনটিই মুমিন মুসলমানের প্রতি মহান আল্লাহর নির্দেশ। আর এ নির্দেশ ছিল উম্মতে মুহাম্মাদির আগের লোকদের জন্যও।
আর যারা আল্লাহর বিধান পালন করতে গিয়ে রোজা রাখবে, তারাই হবে তাকওয়াবান। এছাড়াও কুরআন-হাদিসে রোজা পালনের অনেক উপকারিতা ঘোষণা করা হয়েছে।
কিন্তু রোজা কীভাবে মানুষকে তাকওয়াবান করে তুলবে? মানুষের মধ্যে আল্লাহর ভয় তৈরি করবে? অথচ আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে রোজার বিধান ঘোষণায় এ তাকওয়া অর্জনের কথা বলেছেন-
‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেভাবে তোমাদের আগের লোকদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছিল। আশা করা যায়, তোমরা আল্লাহভীতি বা পরহেজগারী অর্জন করতে পারবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)
যারা রোজা রাখবে তাদের ব্যাপারে এ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আশা করা যায়, তোমরা তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় অর্জন করতে পারবে।’
রমজানের নির্দেশনা হলো-
দিনের বেলায় হালাল বস্তু পানাহার, বৈধ স্বামী-স্ত্রীর মেলামেশা থেকে বিরত থাকার মাধ্যম রোজা পালন করা। কেউ যদি আল্লাহর শাস্তির ভয়ে দিনের বেলা উল্লেখিত হালাল কাজগুলো থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারে তাহলে নিঃসন্দেহে সে আল্লাহর ভয় অর্জন করতে পারবে।
যারা আল্লাহর নির্দেশে হালাল কাজ থেকে নিজেদের বিরত থাকতে পারে, নিঃসন্দেহে তারা দুনিয়ার সব হারাম কাজ থেকেও বিরত থাকতে পারবে।
মানুষের পেটে যখন ক্ষুধা লাগে তখন দেহের অনেক অঙ্গেই তা আন্দোলিত কিংবা পরিলক্ষিত হয়। যখনই কেউ ক্ষুধা নিবারনে খাবার খায়, তখন তার সেসব অঙ্গ স্বস্তি ও চাঙা হয়ে যায়।
রোজা মানুষকে শয়তানের প্ররোচনা থেকে হেফাজত করে, যৌন উত্তেজনাকে প্রশমিত করে। রোজা রাখার ফলে মানুষের যখন ক্ষুধা লাগে তখন মানুষ গরিব-দুঃখির না খাওয়ার কষ্ট বুঝতে সক্ষম হয়। তাদের প্রতি রোজাদারের হৃদয় ও মন আকৃষ্ট হয়। তাদের ক্ষুধার কষ্ট লাগবে রোজাদারের দান-খয়রাত করার মানসিকতা তৈরি হয়।
কষ্টের সম্মুখীন হওয়া ছাড়া মুখে শুনে কিংবা বই পড়ে কোনো মানুষই কষ্টের পরিপূর্ণ বাস্তবতা অনুধাবন করতে পারে না। যখন মানুষ কষ্টের সম্মুখীন হয় তখনই কেবল বাস্তব কষ্ট কেমন তা বুঝতে সক্ষম হয়। যেমনিভাবে গাড়িতে চড়া ব্যক্তি পায়ে হাটা ব্যক্তির কষ্ট কখনো অনুধাবন করতে পারবে না, যতক্ষণ না সে সমান দূরত্ব পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি না দেয়।
সুতরাং আল্লাহর নির্দেশে রমজানের উপবাস থাকার মাধ্যমে রোজা পালন করলেই মানুষ প্রকৃত কষ্ট উপলব্ধি করতে পারে। আর তাতে রোজা প্রকৃত শিক্ষাও মানুষের সামনে ফুটে ওঠে। মানুষ হয়ে ওঠে পরহেজগার বা তাকওয়াবান।
রোজা মানুষকে নিয়ম-শৃঙ্খলা শিক্ষা দেয়। আল্লাহর নির্দেশ পালনের মানসিকতা তৈরি করে দেয়। নফসের দাসত্ব ও পাপ কাজ থেকে দূরে রাখে। যারা আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে, তারা দুনিয়ার ধনি-গরিব সব মানুষের প্রতি সদয় থাকে।
রমজানের রোজা দুনিয়ার সব মুসলমানকে এক কাতারে সামিল করে দেয়। ধনি-গরিব কিংবা আমির-ফকিরে কোনো বৈষম্য থাকে না। কেননা ইফতার-সাহরি গ্রহণে কেউই সময়ের ব্যবধান করতে পারে না।
রমজান অন্য সময়ের তুলনায় মানুষকে মসজিদের দিকে বেশি ধাবিত করে। মন্দ কাজের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। আল্লাহর নির্দেশ পালনে একনিষ্ঠ হয়। আর এভাবেই মানুষ মন্দ কাজ থেকে বিরত থেকে আল্লাহর ভয় অর্জনে উদ্বুদ্ধ হয়।
আল্লাহ তাআলা মানুষকে রমজানের রোজা পালনের মাধ্যমে কুরআনের ঘোষণা তাকওয়া অর্জন করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া পরকালের যাবতীয় নেয়ামতে জীবন পরিপূর্ণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।